শিশুর শরীরে ড্রাই ফ্রুটস এর উপকারিতা


আপনার শিশুকে এই খাবারগুলো খেতে দিন তাহলে দেখুন কি পরিবর্তন আসে , বর্তমানে শিশু বাচ্চাদের অনেক রুগ হয়ে থাকে কিন্ত এ ড্রাই ফ্রুটস এর উপকারিতা আপনি যদি জেনে থাকেন তাহলে অবাক হতে বাধ্য হবেন , তাহলে চলুন ড্রাই ফ্রুটসের বিষয়ে সব তথ্য জেনে নেই

💖অমৃতা ছোট্ট রুমকিকে নিয়ে শপিংয়ে গিয়েছিল। শপিং করতে করতেই হঠাৎ ওর চোখে পড়ল ড্রাই ফ্রুটস-এর সেকশনে। রুমকিই ওইদিকে আঙুল দেখাচ্ছিল। অমৃতা ভাবলো, রুমকিকে এই বয়সে কি শুকনো ফল খাওয়ানো যায়? ড্রাই ফ্রুটস-এর যে অনেক গুণ তা ও শুনেছে। রুমকির এখন বয়স মাত্র সাড়ে তিন বছর। ও ঠিক করল চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলেই সিদ্ধান্ত নেবে। রুমকির চিকিৎসক আসলে অমৃতার পারিবারিক বন্ধু। ড্রাই ফ্রুটস-এর ব্যাপার শোনার পর চিকিৎসকই এই ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনা করলেন।

 ☘️ড্রাই ফ্রুটস কী?
ড্রাই ফ্রুটস খাওয়ানোর আগে এর সম্পর্কে জেনে নেওয়া প্রয়োজন। এই ফল তৈরি হয় সাধারণ জলীয় ফল থেকেই। বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে অথবা প্রাকৃতিক উপায়ে ফলগুলোর থেকে জল বের করে এগুলোকে শুকোনো হয়। শুকনোর ফলে এতে শুধু পুষ্টিদ্রব্যগুলোই থাকে। সাধারণ ফলে জলীয় অংশ থাকায় তা বেশিদিন সংরক্ষণ করা যায় না। ড্রাই ফ্রুটস-এর ক্ষেত্রে তেমন কোনও সমস্যাই নেই। এগুলো যতদিন ইচ্ছে সংরক্ষণ করা যায়।

☘️সবসময়ই ড্রাই ফ্রুটস অনেক হেলদি, কিন্তু শীতকালের জন্য খুবই উপকারী পথ্য হিসেবে কাজ করে::
ড্রাই ফ্রুটস শীতকালে খেলে বেশি উপকারি। এই কথা চিকিৎসক বলতেই, অমৃতার মনে প্রশ্ন জাগে এমনটা কেন? চিকিৎসক তার উত্তরও দেন। ড্রাই ফ্রুটস-এ রয়েছে প্রচুর পরিমাণে এসেনসিয়াল অয়েল আর ভিটামিন। শীতকালে আমাদের ত্বক শুষ্ক হয়ে যায়। ত্বকের জন্য প্রয়োজনীয় ভিটামিন ড্রাই ফ্রুটস থেকেই মেলে। এছাড়া শীতকালে সর্দি কাশি ইত্যাদির প্রবণতা বেড়ে যায়। শরীরের প্রতিরোধক্ষমতা কমে গেলেই এই রোগগুলো চেপে বসে। ড্রাই ফ্রুটস-এ রয়েছে বিভিন্ন প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান। এগুলোই শরীরের প্রতিরোধক্ষমতা বাড়াতে সাহায‌্য  করে।


☘️ড্রাই ফ্রুটস বেছে নেবেন কেন:
চিকিৎসক অমৃতাকে বুঝিয়ে দিলেন ড্রাই ফ্রুটস কেন শীতে খাওয়া প্রয়োজন। তা শুনতে শুনতেই ওর কৌতুহল হল। ড্রাই ফ্রুটস-এর এতো গুণ! অমৃতার অবাক হওয়া দেখে চিকিৎসক এর উপকারিতা নিয়ে আরও কয়েকটি তথ্য জানালেন ।

#1. অ্যানিমিয়া: বেশিরভাগ শিশুই সরাসরি স্তন্যপান করে বড় হয়। বিশেষজ্ঞদের কথায়, এমন শিশুদের অ্যানিমিয়া  হওয়ার আশঙ্কা অন্যদের তুলনায় বেশি। খেজুর, কিসমিস, খুবানি ইত্যাদি শুকনো ফলে প্রচুর পরিমাণে আয়রন থাকে। খুদেকে নিয়মিত শুকনো ফল খাওয়ানো হলে রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা ঠিক থাকে। অ্যানিমিয়ার আশঙ্কাও দূর হয়।

#2. এনার্জি জোগায়: খুদের বেড়ে ওঠার সঙ্গে বাড়তে থাকে তার দুষ্টুমি। নানারকম দুষ্টুমির জন্য ওর প্রয়োজন যথেষ্ট পরিমাণে ক্যালোরি। শুকনো ফলে যেমন আমন্ড, ওয়ালনাট, খেজুর ইত্যাদিতে রয়েছে ছোট্ট শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় খনিজ পদার্থ, প্রোটিন ও জিংক। ছোট্ট সোনাকে এগুলোই সারাদিন হইচই করার শক্তি জোগায় ।

#3. রোগপ্রতিরোধক্ষমতা গড়ে তোলে:শুকনো ফল যেমন বাদাম জাতীয় ফলের মধ্যে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তোলার জন্য প্রয়োজনীয় উপাদান থাকে । সিজারিয়ান সন্তানদের ক্ষেত্রে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা নর্ম্যাল ডেলিভারির শিশুদের তুলনায় কম হয়। মায়ের দুধ খাওয়ার পর ছোট্ট খুদে শক্ত খাবার খাওয়া শুরু করে। এই সময় বিশেষজ্ঞরা খুদেকে আমন্ড, বাদাম ইত্যাদি শুকনো খাবার খাওয়ানোর পরামর্শ দেন।

#4. স্ট্রেস কমায়: ছোট্ট বলে ওর যে স্ট্রেস হয় না, তা নয়। বরং চারপাশের চেঁচামেচি বা অশান্তি ওর মনে সহজেই প্রভাব ফেলে। যা থেকে ওর ভিতরে স্ট্রেস তৈরি হয়। শুকনো ফল যেমন আমন্ড ওয়ালনাট, খেজুর ইত্যাদিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট । এই অ্যান্টিঅক্সিডেন্টই ছোট্ট সোনার স্ট্রেস কমাতে সাহায্য করে।

#5. ডিএনএ-কে বাঁচায়: ছোট্ট সোনা বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তার প্লেটে খাবারের পরিমাণ ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে। এই খাবারের অনেকগুলোই খুদের ডিএনএ-এর ক্ষতি করতে পারে, এমনকী ক্যান্সারের আশঙ্কাও বাড়াতে পারে। শুকনো বাদামজাতীয় ফলে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এই আশঙ্কা অনেকটা কমিয়ে দেয়।

 ♥️6. চোখ ও হাড়কে সবল করে: শুকনো ফল যেমন খেজুর, খুবানি, কিসমিস ইত্যাদি ফলে রয়েছে ভিটামিন এ । এছাড়া বাদামজাতীয় ফলে থাকে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম। ভিটামিন এ খুদের দৃষ্টিশক্তি প্রখর করে । ক্যালসিয়াম ওর ছোট্ট হাড়গুলোকে মজবুত করে তোলে।

♥️7. কোষ্ঠকাঠিন্য কমায়: ছোট্ট সোনার ক্ষেত্রেও অনেক সময় কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দেখা যায়। ওয়ালনাট, আমন্ড ইত্যাদি বাদাম জাতীয় শুকনো খাবারে রয়েছে যথেষ্ট পরিমাণে ফাইবার। ফাইবার অন্যান্য খাবার হজমের কাজকে সহজ করে দেয় । এতে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা কমে যায়।

♥️8. মস্তিষ্কের বিকাশ: খুদের মস্তিষ্কের বিকাশেও সমান গুরুত্বপূর্ণ শুকনো ফল। বাদাম জাতীয় ফল বিশেষত ওয়ালনাটে রয়েছে এসেনসিয়াল অয়েল, ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড। ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড খুদের মস্তিষ্কের উন্নতিতে  সাহায্য করে।

 ♥️💜ছোট্ট সোনাকে ড্রাই ফ্রুটস কখনও গোটা খাওয়ানো উচিত নয়। এতে ওর গলায় আটকে শ্বাসকষ্ট হতে পারে। চিকিৎসক তাই ড্রাই ফ্রুটস-এর বেশ কয়েকটি রেসিপিও বলে দিলেন অমৃতাকে।

💦ড্রাই ফ্রুটস বা শুকনো ফল দিয়ে তৈরি ৩ স্বাস্থ্যকর ও সুস্বাদু রেসিপি:

💦💜ড্রাই ফ্রুট পাউডার: ড্রাই ফ্রুট পাউডার হল একাধিক শুকনো ফল গুঁড়ো করে তৈরি মিশ্রণ। এই রেসিপির জন্য প্রয়োজন ৫০ গ্ৰাম কাজু, ৫০ গ্রাম পেস্তা ও ৫০ গ্ৰাম আমন্ড। প্রথমে একটি প্যানে এই তিনটি ফল তেল ছাড়া অল্প রোস্ট করে নিতে হবে। এরপর একটি মিক্সারে রোস্টেড ফলগুলো ঢেলে ভালো করে মিহি করে নিন। এই পাউডারই খুদেকে সার্ভ করুন লাঞ্চ বা ডিনারের আগে। মিক্সারে তৈরি পাউডার একটি কৌটায় সংরক্ষণ করে রাখতে পারেন।


💦💜ড্রাই ফ্রুট পিউরি: ড্রাই ফ্রুটের পিউরিও তৈরি করে দিতে পারেন আপনার সোনামণির জন্য। এক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় উপকরণগুলো হল একটি কলা, দুধ ও কিছু ড্রাই ফ্রুটস। শুকনো ফল হিসেবে বেছে নিন আমন্ড, খুবানি, ওয়ালনাটস ‌ইত্যাদি। প্রথমে কলা ও অন্যান্য ড্রাই ফ্রুটগুলো একটি মিক্সারে ভালো করে মিশিয়ে নিন। মিশ্রণের ঘনত্ব কমাতে এতে প্রয়োজনমতো দুধ দিতে পারেন‌। ঘনত্ব ঠিকঠাক হয়ে এলে খুদেকে একটি পাত্রে ঢেলে সার্ভ করুন।


💦💜ড্রাই ফ্রুট মিল্ক: ড্রাই ফ্রুট মিল্কের দারুণ স্বাদ বেশিরভাগ খুদেরই খুব প্রিয়। ড্রাই ফ্রুট মিল্ক তৈরি করতে প্রয়োজনীয় উপকরণ হল পেস্তা, কাজুবাদাম, কিসমিস ও ছোট ছোট করে কেটে রাখা খেজুরের টুকরো। প্রথমে পেস্তা ও কাজুবাদাম একটি প্যানে তেল ছাড়া সামান্য রোস্ট করে নিন। এরপর খেজুর ও কিসমিস সমেত রোস্টেড ফলগুল মিক্সারে ভালো করে মিশিয়ে নিতে হবে। মিশ্রণটি সম্পূর্ণ মিহি হয়ে এলে এতে হালকা গরম এক গ্লাস দুধ মিশিয়ে দিন। মিশ্রণটি দুধে সম্পূর্ণ না মেশা পর্যন্ত চামচ দিয়ে ভালো করে নাড়ুন। লক্ষ্য রাখতে হবে, যাতে কোনও দলা দুধের মধ্যে না থেকে যায়। দলা ওর গলায় আটকে যেতে পারে। সম্পূর্ণ মিশে গেলে খুদেকে গরম গরম সার্ভ করুন ড্রাই ফ্রুট মিল্ক।


♥️♥️খুদে রুমকি ছোট্ট থেকেই সর্দিকাশিতে ভুগত। চিকিৎসকের পরামর্শ মতো অমৃতা রুমকিকে ড্রাই ফ্রুটস এর নানা রেসিপি করে দিতে শুরু করে। শীতকালে নিয়মিত শুকনো ফল খাওয়ার ফলে ওর রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা আগের তুলনায় অনেকটাই বৃদ্ধি পায়। এরপর ও আর কখনওই তেমন সর্দিকাশিতে ভোগেনি। এর জন্য অবশ্য অমৃতা মনে মনে ড্রাই ফ্রুটস-কেই ধন্যবাদ জানিয়েছে।

আজ তাহলে এ পর্যন্ত সকলেই ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন এবং আপনার সন্তানের সঠিক ভাবে যত্ন নিন

No comments

Powered by Blogger.