বাকরখানির সঠিক ইতিহাস

 


প্রায় আড়াই শ’ বছরের পুরনো ঐতিহ্যের ধারক এ বাকরখানি আর কাপভর্তিচায়ের মাধ্যমেই জেগে ওঠে পুরান ঢাকাবাসী। 

লিখছি পুরান ঢাকার একটি ঐতিহ্যবাহী খাবার বাকরখানি নিয়ে।

এত বছর পুরনো হয়েছে সত্য, তবে বাকরখানির চাহিদা কমেনি বরং সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে। 

এমনকি আধুনিক সময়ে দেশের সীমানা ছাড়িয়ে বাকরখানি বিদেশেও রফতানি হচ্ছে। 


পুরান ঢাকার ইতিহাস থেকে জানা যায়, ঐতিহ্যবাহী এই বাকরখানি তৈরির পেছনে রয়েছে এক অমর প্রেমকাহিনী। 

আগা বাকের নামে তুর্কিস্তানের এক বালক ক্রীতদাস হয়ে এসেছিল এ দেশে। তখনকার বাংলার সুবেদার নবাব মুর্শিদ কুলি খাঁ সুদর্শন এ বালককে কিনে নিয়েছিলেন। 

আগা বাকেরের বুদ্ধিমত্তায় মুগ্ধ হয়ে নবাব তার পড়াশোনার ব্যবস্থা করেন। 

আগা বাকের প্রথমে চট্টগ্রামে ফৌজদারের দায়িত্ব পালন করেন। 

এরপর দীর্ঘ সময় তিনি বাকলা চন্দ্রদ্বীপের শাসনকর্তা ছিলেন। 

তার নামানুসারেই বাকেরগঞ্জ জেলার নামকরণ হয় যাকে আমরা এখন বরিশাল নামে চিনি। 

আগা বাকের ভালোবেসেছিলেন সুন্দরী নর্তকী খনি বেগমকে। 

তার প্রেমের প্রতিদ্বন্দ্ব্বী ছিলেন কোতয়াল জয়নুল খাঁ। 

এই নর্তকীকে ঘিরে আগা বাকের ও জয়নুল খাঁর দ্বন্দ্ব শুরু হয়। 

নবাব মুর্শিদ কুলি খাঁ এই দ্বন্দ্বের কারণে মৃত্যুদণ্ড দিয়ে বাকেরকে এক বাঘের খাঁচায় নিক্ষেপ করেছিলেন। 

শক্তিধর বাকের বাঘকে হত্যা করে খাঁচা থেকে বীরের মতো বেরিয়ে এসেছিলেন। 

ততক্ষণে খনি বেগমকে অপহরণ করে দুর্গম চন্দ্রদ্বীপের গহীনে পালিয়ে গিয়েছিলেন জয়নুল খাঁ। 

আগা বাকের প্রেমিকাকে উদ্ধারে চন্দ্রদ্বীপে উপস্থিত হলে জয়নুল খাঁ খনি বেগমকে হত্যা করে নিজে আত্মহত্যার পথ বেছে নেন। 

খনি বেগমকে না পেলেও প্রেমের স্মৃতি চিরজাগরুক রাখতে আগা বাকের নতুন ধরনের শুকনো রুটি তৈরি করিয়ে তার নাম দিয়েছিলেন বাকেরখনি। 

পুরান ঢাকার প্রখ্যাত লেখক নাজির হোসেনের ‘কিংবদন্তির ঢাকা’ গ্রন্থেও বলা হয়েছে এ কথা। 

সাধারণ মানুষের উচ্চারণে যা আজ বাকরখানি হয়ে গেছে। 

সে সময় এটা ছিল নবাব আর আমিরদের প্রিয় খাবার। 

লালবাগ কেল্লার কাছেই প্রথম বাকরখানির দোকান গড়ে উঠেছিল। 

এরপর সেখান থেকে ধীরে ধীরে পুরান ঢাকার চানখাঁরপুল, আগা নবাব দেউড়ি, কোতোয়ালি, চকবাজার, বংশাল, হাজারীবাগ ও সূত্রাপুর এলাকায় বিস্তার লাভ করে। 

পুরনো ঢাকার নাজিমুদ্দিন রোডের দুই পাশেও রয়েছে বাকরখানির অনেক দোকান। 

বাকরখানি চায়ের সঙ্গে খাওয়ার প্রচলন পুরান ঢাকায় বেশি। 

এ ছাড়াও গরু, খাসি, মুরগির মাংসের সঙ্গেও বাকরখানির স্বাদ অতুলনীয়। 

অনেক জায়গায় ক্ষীর ও পায়েসের সঙ্গেও পরিবেশন করা হয় বাকরখানি। আজ তাহলে এ পর্যন্ত সকলেই ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন

No comments

Powered by Blogger.